বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে তিনটি ছাত্রী হলের কাজ আগেই শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, স্থান নির্বাচন জটিলতায় এবং আন্দোলন চলমান থাকায় তিনটি ছাত্র হলের কাজ স্থগিত ছিল। এবার করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের অংশে শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন মাঠে স্থগিত থাকা ছাত্রদের তিনটি হলের কাজ পুরোদমে শুরু করে প্রশাসন। আর এ কাজ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের প্রধান সড়কসহ কয়েকটি সড়ক চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক মেরামত না করতে পারলে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কেউই চলাচল করতে পারবে না।
সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আর যদি তাই হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত নিয়ে বেশ চাপে পড়বে প্রশাসন। তাদের গাফলতি এবং অদূরদর্শিতার জন্য সড়কের অবস্থা এমনটা হয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক মেরামতের কাজ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস। একই কথা জানান প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিনও।
তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে সড়ক কিছুটা নষ্ট হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এতটা যে নষ্ট হবে এটা আমাদের ধারণা ছিল না।’
আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আছেন এমন একজন শিক্ষকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কোনো বিষয়ই আমাকে জানানো হয় না। ফলে এ বিষয়েও আমি কিছুই জানি না।’
সড়কের ভাঙা অংশগুলো কারা কীভাবে মেরামত করবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেরামত করবে না যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য সড়ক নষ্ট হয়েছে তারা মেরামত করবে তা এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি কাজ শুরুর সময় এসব বিষয়ে কোনো কথাও হয়নি।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যেহেতু আমরা কাজ করাচ্ছি এবং তাদের গাড়ি চলার কারণে সড়ক নষ্ট হয়েছে, সেহেতু দুই পক্ষ মিলেই ঠিক করতে হবে। কারও একার ওপর তো বিষয়টা চাপানো যাবে না। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে নতুনভাবে সড়ক তৈরির জন্য আলাদা বাজেট আছে। কিন্তু এখন ওই বাজেট থেকে অর্থ শেষ করলে পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়কের কাজ করা যাবে না। তাই আলোচনা করে দুপক্ষের জন্য যেটা ভালো হয় সেভাবেই কাজ করতে হবে।’
তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ভাঙা অংশগুলো মেরামত করবে বলে জানান প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন শিক্ষক। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তাদের কাজের কারণে সড়ক নষ্ট হয়েছে। এখন তাদের কাজের স্বার্থেই ঠিক করতে হবে। সাময়িকভাবে হলেও খুব দ্রুতই তারা মেরামতের কাজ শুরু করবে।
হলগুলোর কাজের জন্য প্রায় ৭০০ গাড়ি প্রতিদিন ক্যাম্পাসের ভেতর চলাচল করছে। এতে প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) থেকে নতুন কলা ভবন, নতুন রেজিস্ট্রার এবং বটতলার রাস্তার বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নতুন কলা ভবনের সামনে এবং নতুন রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বটতলা পর্যন্ত সড়কের পুরো অংশ বড় বড় গর্ত হয়ে দেবে গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের দুপাশের মাটিও সরে গেছে। দেখে কোনোভাবেই বুঝার উপায় নেই কিছুদিন আগেও এটা মসৃন সড়ক ছিল। ফলে ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের জন্য হাঁটা-চলা করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আর বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।
নতুন রেজিস্ট্রারের সামনের সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এক শিক্ষকের সাথে। তিনি বলেন, ‘এখন তো কষ্ট হলেও হাঁটা যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হলে হাঁটা অসম্ভব। ঈদের সময় বেশ কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় তো এদিক দিয়ে হাঁটা যেত না। একদিন বিকালে বের হয়ে পরে আর ভয়েই বের হয়নি।’
একইরকম অভিজ্ঞতার কথা জানান দর্শন বিভাগের একজন অধ্যাপকও।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এসব সড়ক দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত যাতায়াত করবে। সে ক্ষেত্রে ভারী যান চলাচল করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য কোনো বিকল্প সড়কের পরিকল্পনা রাখা হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক একটি সড়কের ধারণা দিয়ে বলেন, ‘সেটি হবে একটি নির্জন সড়ক। যেখান দিয়ে মানুষের চলাচল খুব একটা থাকবে না।’
তার মতে, ক্যাম্পাস খোলার পর গাড়িগুলো বিশমাইল গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। সেখান থেকে স্কুল-কলেজের সামনের সড়ক হয়ে চৌরঙ্গী হয়ে মেডিকেলের সামনে দিয়ে আল বেরুনী হলের খেলার মাঠের ওপর দিয়ে গাড়িগুলো নির্মাণ কাজের জায়গায় চলে যাবে।